Thursday, November 22, 2018

পানাম সিটির ট্রাজেডি


নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার শহরের বাইরে এক পরিত্যক্ত প্রাচীন শহর কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায়ে আছে; নাম পানাম নগর। সাজানো গোছানো এমন একটি অভিজাত শহর হঠাৎ জনশুন্য হল কেন আমি তার উত্তর খুজে পাচ্ছিলাম না। নেট -এ ঘেটেও তেমন কোন উত্তর নেই। অথচ ওই পানার সিটির এক বাসিন্দা প্রাণ গোবিন্দ চক্রবর্তীর পুত্র বিশ্বনাথ চক্রবর্তী প্রতিদিনই কোর্টে আসে অামার সামনে বসা অ্যাডঃ ভুপেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর কাছে। দীর্ঘ ১৮ বছর পর তার মুখে শুনলাম সেই করুন ট্রাজেডি।









ঘটনার দিন তার মা বাবার বাড়ীতে এসেছিলেন ঢাকায়, তার বাবা গিয়েছিলেন জজমানের বাগড়ীতে পৌরোহিত্য করতে ; তাই তারা বেঁচে গিয়েছিলেন।

১৯৬৪ সালের জানুয়ারীর ২ তারিখ। কাশ্মিরের হযরত বাল মসজিদ থেকে হযরত মুহম্মদের একগুচ্ছ চুল হারানো গেছে এই মিথ্যা গুজব ছড়ায় দুষ্কৃতিকারীরা। অার অমনি রে রে করে হাজার হাজার মুসলিম জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে বর্ধিষ্ণু হিন্দু শহর মানাম নগরে। মুহুর্তের মধ্যে কচুকাটা হয় শহরের কয়েক হাজার বাসিন্দা। প্রতিটি বাড়ীতে রক্তের স্রোত বয়ে যায়; বাদ যায়নি নারী শিশু। কেউ প্রাণে বাঁচতে পারেনি। দু' পাশের খাল দিয়ে রক্তের স্রোত বয়ে যায়। জনশুন্য হয়ে যায় ২০০ বছর ধরে তিলতিল করে গড়ে তোলা একটি বর্ধিষ্ণু হিন্দু শহর। ঈশা খাঁর অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে হিন্দু ধনিক ব্যবসায়ীরা একত্র হয়ে একটি শহর গড়ে তুলেছিলো। নিরাপত্তার জন্য চারপাশে কৃত্তিম খাল কেটে জল দূর্গ গড়ে তুলেছিল তারা। আজ করুণ দৃষ্টিতে সারি সারি দাঁড়ায়ে আছে জৌলুসময় বিশাল বিশাল অট্টলিকা। আজ হাজার হাজার মানুষ টিকিট কেটে দেখতে যায় পানাম নগর; কিন্তু কেউ জানে না এর করুন ইতিহাস। হাজার হাজার মানুষের আর্ত চিৎকার আর ক্রন্দনধ্বনি আকাশে বাতাসে আজও ঘুরে ফেরে। নিরবে কান পাতলে শোনা যায় ক্রন্দন আর আর্ত চিৎকার। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বাড়ীগুলো বসবাসের জন্য লীজ দিয়েছিলো, কিন্তু কেউ থাকতে পারেনি। রাতে সেই অতৃপ্ত আত্মাগুলো ঘুরে ফেরে প্রতিটি বাড়ী। এর মধ্যে একটি বাড়ী আছে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর। জজ কোর্ট, হাইকোর্ট, সুপ্রীম কোর্টের অ্যপিলেট ডিভিশনে জেতার পরও সরকার ফিরিয়ে দেয়নি তার বাড়ীটি। নগরীটির দখলসত্বে মালিক এখন সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের অধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। অসাম্প্রদায়িক! মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সহ তার অধিন্তদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন ক্ষতিপূরণ পাননি। এই মন্ত্রী বরং যাতে জমি বাড়ী ফেরৎ না পায় তার জন্য হাইকোর্টে রীট করেছেন একাধিকবার, ফল বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর পক্ষে। তবুও দেয়নি বাড়ী বা তার ক্ষতিপুরন। এই আমাদের হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক দেশ।

No comments:

Post a Comment