Wednesday, August 17, 2016

প্রণাম মন্ত্রঃ (বাংলা অনু্বাদ সহ)

  প্রণাম মন্ত্রঃ
শ্রীগুরুর প্রণাম
ওঁ অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।
অনুবাদঃ অজ্ঞতার গভীর অন্ধকারে আমার জন্ম হয়ে ছিল এবং আমার গুরুদেব জ্ঞানের আলোক বর্তিকা দিয়ে আমার চক্ষু উন্মীলিত করলেন। তাকেঁ জানাই আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি।
শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম
হে কৃষ্ণ করুণাসিন্ধো দীনবন্ধো জগৎপতে।
গোপেশ গোপীকাকান্ত রাধাকান্তায় নমোহস্তুতে।।
অনুবাদঃ হে আমার প্রিয় কৃষ্ণ, তুমি করুণার সিন্ধু, তুমি দীনের বন্ধু, তুমি সমস্ত জগতের পতি, তুমি গোপিকাদের ঈশ্বর এবং শ্রীমতি রাধারাণীর প্রেমাষ্পন্দ, আমি তোমার শ্রীপাদ্‌পদ্মে সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
শ্রী রাধারাণীর প্রণাম
অনুবাদঃ তপ্তকাঞ্চন গৌরাঙ্গীরাধে বৃন্দাবনেশ্বরী।
বৃষভানুসূতে দেবী ত্বং নমামি কৃষ্ণপ্রিয়ে।।
অনুবাদঃ শ্রীমতি রাধারাণী, যার অঙ্গকান্তি তপ্ত কাঞ্চনের মতো এবং যিনি বৃন্দাবনের ঈশ্বরী, যিনি মহারাজ বৃষভানুর দুহিতা এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রেয়সী, তাঁর চরণকমলে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি জানাই।
শ্রী শ্রী তুলসীদেবীর প্রণাম
ওঁ বৃন্দায়ৈ তুলসীদেব্যৈ প্রিয়ায়ৈ কেশবস্য চ।
কৃষ্ণভক্তি প্রদে দেবী! সত্যবত্যৈ নমো নমঃ।।
অনুবাদঃ কেশবপ্রিয় বৃন্দাদেবী যিনি কৃষ্ণ-ভক্তি প্রদান করেন, সেই সত্যবতী তুলসী দেবীকে আমি বার বার প্রণাম নিবেদন করি।
শ্রীগৌরাঙ্গ প্রণাম
নমো মহাবদান্যায় কৃষ্ণপ্রেমপ্রদায় তে।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণচৈতন্যনাম্নে গৌরত্বিষে নমঃ।।
অনুবাদঃ আমি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই, যিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ এবং অন্যান্য অবতার অপেক্ষা উদার, তিনি অত্যন্ত দুর্লভ কৃষ্ণপ্রেম প্রদান করেছেন, তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি জানাই।
শ্রী শ্রী পঞ্চতত্ত্ব প্রণাম
পঞ্চতত্ত্বাত্মকং কৃষ্ণং ভক্তরূপস্বরূপকম্‌।
ভক্তাবতারং ভক্তাখ্যং নমামি ভক্তশক্তিকম্‌।।
অনুবাদঃ ভক্তরূপ, ভক্তস্বরূপ, ভক্ত অবতার, ভক্ত এবং ভক্ত শক্তি এই পঞ্চতত্ত্বাত্মক শ্রীকৃষ্ণের শ্রীচরণ কমলে প্রণতি নিবেদন করি। (ভক্তরূপ-শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, ভক্তস্বরূপ-নিত্যানন্দ প্রভু, ভক্তাবতার-অদ্বৈত আচার্য প্রভু, ভক্ত-শ্রীবাস ঠাকুর, ভক্তশক্তি-শ্রীগদাধর পন্ডিত)
শ্রী শ্রী বৈষ্ণব প্রণাম
বাঞ্ছা কল্পতরুভ্যশ্চ কৃপাসিন্ধুর্ভ এব চ।
পতিতানাং পাবনেভ্য বৈষ্ণবেভ্য নমো নমঃ।।
অনুবাদঃ সমস্ত বৈষ্ণব ভক্তবৃন্দ, যাঁরা বাঞ্ছাকল্পতরুর মতো সকলের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে পারেন, যাঁরা কৃপার সাগর এবং পতিত পাবন, তাদের চরণ কমলে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
পঞ্চতত্ত্ব মহামন্ত্র
(জয়) শ্রীকৃ্ষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ।
শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌরভক্তবৃন্দ।।
অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য, প্রভু নিত্যানন্দ, শ্রীঅদ্বৈত আচার্য, শ্রীগদাধর এবং শ্রীবাস আদি গৌরভক্তবৃন্দের জয় হোক।
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
 
 
-:ত্রিসন্ধ্যা বিধি:-
দিবাভাগে পূর্ব্বমুখ এবং রাত্রিভাগে উত্তরমুখ হয়ে পদ্মাসনে উপবেশন পূর্ব্বক।
জলশুদ্ধি:-
 ওঁ গঙ্গে চ যমুনেচৈব গোদাবরি সরস্বতী।
নর্মদে সিন্ধুকাবেরি জলেহস্মিন্‌ সন্নিধিং কুরু।।
আচমন:- দুই বার।
ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু, ওঁ তদ্বিষ্ণো পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ। দিবীব চক্ষুরাততম্‌ নমো অপবিত্রঃ পবিত্রোবা সর্ব্বাবস্থাং গতোহপি বা যঃ স্মরেৎ পুন্ডরীকাক্ষং সঃবাহ্য অভ্যন্তরঃ শুচি।।
বিষ্ণু স্মরণ:-
ওঁ শঙ্খচক্রধরং বিষ্ণুং দ্বিভুজম্‌ পীতবাসসম্‌।
প্রারম্ভে কর্ম্মানাঙ বিপ্রঃ পুন্ডরীকং স্মরেৎ হরিম্‌।।
তিলক গুলিবার মন্ত্র:-
ওঁ নমো কেশবানন্ত গোবিন্দ বরাহ পুরুষোত্তম।
পূণর্যশাস্যামায়ুস্যং তিলকং মে প্রসীদতু।।
তিলক ধারণ মন্ত্র:-
১. ললাটে- শ্রী কেশবায় নমঃ
২. উদরে- শ্রী নারায়ণায় নমঃ
৩. বক্ষঃস্থলে- শ্রী মাধবায় নমঃ
৪. কন্ঠে- শ্রী গোবিন্দায় নমঃ
৫. দক্ষিণ কুক্ষিতে- শ্রী বিষ্ণুবে নমঃ
৬. দক্ষিণ বাহুতে- শ্রী মধুসূদনায় নমঃ
৭. দক্ষিণ স্কন্ধে- শ্রী ত্রিবিক্রমায় নমঃ
৮. বাম কুক্ষিতে- শ্রী বামনায় নমঃ
৯. বাম বাহুতে- শ্রী শ্রীধরায় নমঃ
১০.বাম স্কন্ধে- শ্রী হৃষীকেশায় নমঃ
১১. পৃষ্ঠে- শ্রী পদ্মনাভায় নমঃ
১২. কটিতে- শ্রী দামোদরায় নমঃ
অতঃপর হস্ত ধৌত জল “ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়” বলিয়া হস্ত ধৌত জল স্বীয় মস্তকে ধারণ করিবেন।
 

Monday, August 15, 2016

অঙ্গষ্পর্শঃ-

দুই বা ততোধিক ডুব দিয়ে গামছা অথবা তোয়ালে দিয়ে রগড়ে শরীরে মাখানো তেল মুছে ফেলে দিতে হবে। শুকনো কাপড় পড়ে জলের নিকট বসে নিম্ন মন্ত্রে আচমন এবং অঙ্গস্পর্শ করতে হবে-
ওম্‌ শংনো দেবীরভিষ্টয় আপো ভবন্তু পীতয়ে।
শংয়োরোভি স্রবন্তু নঃ ।। ঋগবেদ ১০/৯/৪, সামবেদ ১/৩/১২

স্নান করি শান্তি নিরে, সবে মাত্র উঠনু তীরে
পূন্য জল পূর্ণ বহুক দেহে।
বহুক সদা সুখ শান্তি, দুরে যাক মোহ ভ্রান্তি
মন যেন সদা সুখে রহে।

অঙ্গষ্পর্শঃ-
ক) ওম্‌ বাঙ্ম আসন (উপরের ওষ্ঠ নিচের ওষ্ঠ)
গ) চক্ষু রক্ষ্ণোঃ (ডান চোখ বাম চোখ)
ঙ) ওম্‌ অপলিতা কেশাঃ (চুল)
ছ) ওম্‌ বহোবর্মে যশোবলম্‌ (ডান বাহু বাম বাহু)
ঝ) ওম্‌ জঙ্ঘয়ো জবঃ (ডান জঙ্ঘা বাম জঙ্ঘা)
ট) ওম্‌ নাভ্যম্‌ (নাভী)
ড) ওম্‌ কন্ঠম্‌ (কন্ঠ)
খ) নসো প্রানঃ (ডান নাক বাম নাক)
ঘ) ওম্‌ শ্রোত্রং কর্ণয়ো ( ডান কান বাম কান)
চ) ওম্‌ আশোনা দন্তুাঃ (দাঁত)
জ) ওম্‌ ঊর্বোরোজো (ডান উরু বাম উরু)
ঞ) ওম্‌ পাদায়োঃ প্রতিষ্ঠা (ডান পা বাম পা)
ঠ) ওম্‌ হৃদয়ম্‌ (হৃদয়)
ঢ) ওম্‌ অরিষ্টানি মেহঙ্গানি তনূস্তাণা মে সহ সন্তু (সর্বাঙ্গে)

Sunday, August 14, 2016

হিন্দু শাস্ত্রীয় “বিবাহ”

স্মৃতি শাস্ত্রের বিখ্যাত গ্রন্থ মনুসংহিতায় আট প্রকার বিবাহের কথা বলা আছে। সেগুলো হল:-

(১) ব্রাহ্ম
(২) আর্য
(৩) প্রাজাপত্য
(৪) আসুর
(৫) গান্ধর্ব
(৬) রাক্ষস
(৭) দৈব

(৮) পৈশাচ

জাতি এবং শ্রেণী বিভাগে এই বিবাহ গুলো হয়ে থাকে তবে ব্রাহ্ম, দৈব, আর্য, প্রাজাপত্য বিবাহ রীতি গুলোই প্রচলিত। বর্তমান মানব সমাজে ব্রাহ্ম বিবাহই স্বীকৃত এবং পালনীয়।
ব্রাহ্ম বিবাহ হল – কন্যাকে বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদন করে এবং অলংকার দ্বারা আচ্ছাদন করে বিদ্বান ও সদাচারী বরকে স্বয়ং আমন্ত্রন করে যে কন্যা দান করা হয়তাকে ব্রাহ্মবিবাহ। বর্তমানে কেউ না মানলেও সমাজে গান্ধর্ব বিবাহের প্রচলন আছে। নারী-পুরুষ পরস্পর শপথ করে মাল্যবিনিময়ের মাধ্যমে যে বিবাহ করে তার নাম গান্ধর্ব বিবাহ। এর উদাহরণ, মহাভারতে দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার বিবাহ গাদ্ধর্ব বিবাহ ছিল।
বেদে খুব পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছেঃ
উদীর্স্বাতো বিশ্বাবাসো নমসেলামহে ত্বা ।
অন্যামিচ্ছ প্রফর্ব্যং সং জায়াং পত্যা সৃজ ।।১০/৮৫/২২।।
—অর্থাত্ তুমি যাও ও অবিবাহিত নারীকে তোমার অর্ধাঙ্গিণী কর এবং তাকে সমান অধিকার প্রদান কর।
আমাদের সনাতন বিবাহে কত গুলো বিধিবিধান শাস্ত্রীয়, কিছু অনুষ্ঠান আচার রয়েছে। শুভলগ্নে নারায়ণ, অগ্নি, শিব, দূর্গা, গুরু ইত্যাদি দেবতাকে আহবান করে এবং পুরোহিত আত্মীয় স্বজনদের সাক্ষী করে মঙ্গল মন্ত্রের উচ্চারণ, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে বিবাহনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বিয়ের মন্ত্রের শেষ হয় যজ্ঞের মাধ্যমে।
বিবাহের মূল মন্ত্র যা স্বামী স্ত্রীরা প্রতিজ্ঞা করে থাকে :
“যদেতত্ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম ।
যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব ।।”
—তোমার এই হৃদয় আমার হোক আমার এইহৃদয় তোমার হোক।
বিবাহের মাধ্যমে একজন নারীপুরুষ চীর জীবন একসাথে সুখে দুঃখে থাকবার প্রতিজ্ঞা করে। বিবাহ আমাদের সনাতন ধমেঃর একটি অন্যতম অংশ। প্রত্যেকেরই জীবনকে পরিপূর্ণ করতে বিবাহ করা আবশ্যক।

বিবাহ অনুষ্ঠান

বাঙালি ব্রাহ্মণ সমাজে পাঁচটি শাখা রয়েছে — রাঢ়ী, বারেন্দ্র, বৈদিক, সপ্তশতী ও মধ্যশ্রেণী। বাঙালি কায়স্থ সমাজে রয়েছে চারটি শাখা — উত্তর রাঢ়ী, দক্ষিণ রাঢ়ী, বারেন্দ্র ও বঙ্গজ। এই সকল বর্ণ এবং তাদের শাখা ও উপশাখাগুলির মধ্যে বিবাহ প্রথায় দুটি বিভাগ দেখা যায় — বৈদিক ও লৌকিক। লৌকিক প্রথাগুলি মেয়েলি আচার। এই কারণে এগুলি ‘স্ত্রী আচার’ নামে পরিচিত। বৈদিক আচারে সাম, যজুঃ ও ঋক্ বেদত্রয়ের অনুসরণকারী ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিবাহ প্রথায় আবার সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। হিন্দু বিবাহের বৈদিক আচারগুলির মধ্যে অপরিহার্য হল কুশণ্ডিকা, লাজহোম (লাজ বা খই দিয়ে যজ্ঞানুষ্ঠান), সপ্তপদী গমন, পাণিগ্রহণ (কন্যার পাণি অর্থাৎ হস্ত গ্রহণ), ধৃতিহোম (ধারণ করার অর্থাৎ কন্যাকে ধরে রাখার যজ্ঞ) ও চতুর্থী হোম। এছাড়া পালিত হয় অরুন্ধতী নক্ষত্র দর্শন, ধ্রুব নক্ষত্র দর্শন, শিলারোহণ ইত্যাদি কয়েকটি বৈদিক প্রথাও।বৈদিক প্রথাগুলি বিধিবদ্ধ শাস্ত্রীয় প্রথা ও বিবাহের মূল অঙ্গ।
বাঙালি হিন্দু বিবাহের লৌকিক আচার বহুবিধ। এই প্রথাগুলি বর্ণ, শাখা, উপশাখা এবং অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের হয়। এগুলির সঙ্গে বৈদিক প্রথাগুলির কোনো যোগ নেই।

পাটিপত্র

পাটিপত্র বাঙালি হিন্দু বিবাহের প্রথম আচার। এই আচার লগ্নপত্র বা মঙ্গলাচরণ নামেও পরিচিত। ঘটকের মাধ্যমে সম্বন্ধ করে বিবাহ স্থির হলে নগদ বা গহনাপত্রে যৌতুক ও অন্যান্য দেনাপাওনা চূড়ান্তভাবে স্থির করার জন্য যে অনুষ্ঠান হয়, তাকেই পাটিপত্র বলে। এই আচারের মাধ্যমেই বিবাহের অন্যান্য আচারের সূচনা ঘটে।[১]

পানখিল

পানখিল বাঙালি হিন্দু বিবাহের দ্বিতীয় আচার। এটি পাটিপত্রের ঠিক পরেই পালিত হয়। পানখিলের অর্থ পান পাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে খিল দেওয়া বা খড়কে বেঁধানো। এই আচারটি প্রথমে বরের বাড়িতে এবং পরে কনের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। পানখিল আচারে বাড়ির মেয়েরা এবং প্রতিবেশিনীরা বিয়ের গান গেয়ে থাকে। এই গানের বিষয়বস্তু হল রাম ও সীতার বিবাহ।[১]

দধি মঙ্গল

দধি মঙ্গল: বিবাহের দিন বর ও কন্যার উপবাস। তবে উপবাস নির্জলা নয়। জল মিষ্টি খাওয়ার বিধান আছে। তাই সারাদিনের জন্য সূর্য্যোদয়ের আগে বর ও কন্যাকে চিড়ে ও দৈ খাওয়ানো হয়।

গায়ে হলুদ

গায়ে হলুদ: সংস্কৃত ভাষায় এই রীতিকে বলা হয় গাত্রহরিদ্রা। হিন্দু ধর্মে কয়েকটি জিনিসকে শুভ বলা হয়। যেমন শঙ্খধ্বনি, হলুদ ইত্যাদি। প্রথমে বরকে ও নিতবরকে সারা গায়ে হলুদ মাখানো হয়। পরে সেই হলুদ কন্যার বাড়ি পাঠানো হয়। কন্যাকে সেই হলুদ মাখানো হয়।

শঙ্খ কঙ্কন

শঙ্খ কঙ্কন: কন্যাকে শাঁখা পরানো হয়।
এরপর বিকালে বিবাহের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়

বর বরণ

বর বরণ: বর বিবাহ করতে এলে তাকে স্বাগত জানান কন্যাপক্ষ। সাধাবনত: কন্যার মা তার জামাতাকে একটি থালায় প্রদীপ, ধান দুর্ব্ব ও অন্যান্য কিছু বরণ সামগ্রী নিয়ে বরণ করেন। এরপর বরকে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় ও দুধ এবং মিষ্টি খাওয়ানো হয় ।

সাত পাক

সাত পাক: বিবাহের মণ্ন্ডপে প্রথমে বরকে আনা হয়। এরপর কন্যাকে পিঁড়িতে বসিয়ে আনা হয়। সাধারণত: কন্যার জামাইবাবুরা পিঁড়ি ধরে থাকেন। কন্যা পান পাতা দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে রাখেন। কন্যাকে পিঁড়িতে করে বরের চারপাশে সাতপাক ঘোরানো হয়।

শুভদৃষ্টি

শুভদৃষ্টি: বিবাহের মন্ডপে জনসমক্ষে বর ও কন্যা একে অপরের দিকে চেয়ে দেখন।

মালা বদল

মালা বদল: কন্যা ও বর মালাবদল করেন। এই রীতির অর্থ হচ্ছে দুজন একে অন্যকে জীবনসঙ্গী হিসাবে মেনে নিলেন। মুসলমান মতে একই ভাবে কন্যাকে বলতে হয় "কবুল"। আবার ঠিক এই রকমই খৃষ্টান মতে চার্চের ফাদারের সামনে বর ও কন্যা বিবাহে সন্মতি জানান।

সম্প্রদান

সম্প্রদান: কন্যার পিতা কন্যাকে জামাতার হাতে সম্প্রদান করেন বেদমন্ত্রে। বরও জানান যে তিনি কন্যার ভরন পোষনের দ্বায়িত্ব নিলেন। বিবাহের মন্ত্র হল " যদেতৎ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম। যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব।।"

অঞ্জলি

অঞ্জলি: কন্যা ও বর খৈ অগ্নাহুতি দেন। প্রচলিত বাংলায় একে বলে খৈ পোড়া। বৈদিক যুগে মানুষ নানা ধরনের শক্তির উপাসনা করতেন। অগ্নিও তাদের মধ্যে অন্যতম।

সিঁদুর দান

সিঁদুর দান: বিবাহের শেষ রীতি হল বর কন্যার কপালে সিঁদুর লেপন করেন। বাঙালি হিন্দু নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় সিঁদুর পরেন।

ভেদাভেদ

জাতিভেদে ও অঞ্চলভেদে এই রীতি কিছু পরিবর্তিত হয়। লৌকিক আচারগুলি অঞ্চল, বর্ণ বা উপবর্ণভেদে এক এক প্রকার হয়।[১] নিম্নবর্ণীয় হিন্দুদের মধ্যে লৌকিক আচার তো বটেই বিবাহের মৌলিক আচারগুলির ক্ষেত্রেও সম্প্রদায়ভেদে পার্থক্য লক্ষিত হয়।



হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রীয় বিবাহের দালিলিক প্রমাণ সুরক্ষার লক্ষ্যে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন
সম্পর্কিত বিধানাবলী প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন

 
যেহেতু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রীয় বিবাহের দালিলিক প্রমাণ সুরক্ষার লক্ষ্যে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন সম্পর্কিত বিধানাবলী প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়
 
 
 বিদ্র: যৌতুক একটি অভিষাপ। হিন্দু শাস্ত্রীয় মত এবং 
  সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রয়োগ ও প্রবর্তন  
১। (১) এই আইন হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন, ২০১২ নামে অভিহিত হইবে।

(২) ইহা নাগরিকত্ব নির্বিশেষে বাংলাদেশে বসবাসরত সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীর জন্য প্রযোজ্য হইবে।

(৩) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে তারিখ নির্ধারণ করিবে সেই তারিখে ইহা কার্যকর হইবে।